কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন আটিপাড়া এলাকায় এক প্রাইভেটকার চালককে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ এনে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নিহত প্রাইভেটকার চালক মিজানুর রহমানের বোন সিদ্দিকা আক্তার বাদী হয়ে কুমিল্লা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৩ নম্বর আমলি আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ২৯ জুন ভোররাতে দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন আটিপাড়া মোস্তাকের মোড় এলাকায় একটি প্রাইভেটকার থেকে একটি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরবর্তীতে নিহত ব্যক্তিকে মিজানুর রহমান (প্রাইভেটকার চালক) হিসেবে শনাক্ত করা হয়। তিনি লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানার উত্তর দুর্গাপুর গ্রামের মৃত মীর মোহাম্মদ আবুল কালামের ছেলে।
প্রাথমিকভাবে ঘটনাটিকে সড়ক দুর্ঘটনা মনে করে পরিবারের সদস্যরা মরদেহ বাড়িতে নিয়ে দাফন সম্পন্ন করেন। তবে ঘটনার কিছুদিন পর নিহতের স্ত্রী ও চাচাতো ভাইদের সঙ্গে পূর্ব বিরোধ, পাশাপাশি তাদের আচার-আচরণে সন্দেহ সৃষ্টি হলে ঘটনাটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে ধারণা করেন পরিবারের সদস্যরা।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, নিহত মিজানুর রহমান দীর্ঘদিন সৌদি আরব প্রবাসে ছিলেন এবং সেখানে উপার্জিত অর্থ স্ত্রীর কাছে পাঠাতেন। দেশে ফিরে তিনি এসব টাকার হিসাব চাইলে স্ত্রী কোনো হিসাব দিতে অস্বীকৃতি জানান। এছাড়া তার বাবা সাত শতক জমি দলিল করে দিলে এর মধ্যে দুই শতক জমি ভুলক্রমে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় তা ফেরত দেওয়ার কথা জানান মিজানুর রহমান। এসব বিষয় নিয়ে স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়।
বাদী সিদ্দিকা আক্তারের অভিযোগ, ঘটনার দিন ভাড়ার কথা বলে মিজানুর রহমানকে ঢাকা নেওয়া হয়। সেখান থেকে পরিকল্পিতভাবে তাকে কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকায় নিয়ে হত্যা করা হয় এবং মরদেহ প্রাইভেটকারে রেখে গাড়িটি রাস্তার পাশের খাদে ফেলে দুর্ঘটনা হিসেবে প্রচার করা হয়।
তিনি আরও জানান, দাফনের আগে মরদেহের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। এর মধ্যে মাথার পেছনে লাঠির আঘাত, কোমরের ডান পাশে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন এবং গলায় রশি পেঁচানোর দাগ ছিল।
পরবর্তীতে ঘটনায় জড়িতদের আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে নিশ্চিত হন তারা।
এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী সেলিনা বেগমসহ ১৬ জনকে আসামি করে আদালতে মামলার আবেদন করা হয়। অন্য আসামিরা হলেন- ফখরুল ইসলাম রাজু, নজরুল ইসলাম পাপ্পু, সাইফুল ইসলাম রাব্বি, সাজিব ভূঁইয়া, সাব্বির হোসেন, মোস্তফা কামাল বাবুল, হুমায়ুন কবির, ওবায়দুর রহমান ফরহাদ, রাজু শাহাদাত হোসেন, রাকিব হোসেন মুসা, বেগম শাহানাজ সেপু, লাভলী আক্তার, জনি ও রাসেল।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আলী হোসেন জানান, আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে দাউদকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)কে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে দাউদকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম আবদুল হালিম জানান, আমি ৩ দিন হলো যোগদান করেছি, বিষয়টি খোজ নিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানান।